ছাত্র ও শিক্ষকের এক হৃদয় বিদারক ঘটনা

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম বাবা কান্না করতাছে। এরপর জানতে পারলাম গতরাত ১.০০ টার সময় বাবার শ্র‌দ্বেয় উস্তাদ শেখেরগাঁও আলিয়া মাদরাসার (মনোহরদী, নর‌সিংদী) অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইউসুফ সাহেব ইন্তেকাল করেছেন।


অসুস্থতা নিয়েই সকাল ১১.০০ টার দিকে বাবাকে নিয়ে জানাজার উ‌দ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম এবং বিকাল ৩ টার দিকে সেখানে গিয়ে উপ‌স্হিত হলাম। য‌দিও বাবার এই শ‌রির নিয়ে সেখানে যাওয়ার কথা নয়। অনেক রাস্তা অতিক্রম করে সেখানে যেতে হয় এবং উ‌নি ডায়ালাই‌সিসের রোগী, সপ্তা‌হে দুবার ডায়ালাই‌সিস করতে হয়। একা একা হাটতেও পারে না তারপরেও সেখানে গেলেন এবং নিয়ে যেতেই হলো। বা‌ড়ির সকলে মানা ক‌রেছে তারপরেও ও‌নি যাবেন এবং গেলেন। যাওয়ার পর আমি যা দেখলাম তাতেই বুঝতে পারলাম উনি কেনো এভাবে কান্না করলেন আর কেনইবা এতো অসুখ নিয়ে সেখানে গেলেন...! আমি এই কোন ভালোবাসার দৃশ্য দেখলাম! জীব‌নে এমন মূহুর্ত দে‌খিনি আগে আর। মানুষের প্রতি মানুষের এতো টান কিভাবে থাকতে পারে! এখানে গিয়ে দেখা অনেক ঘটনা থেকে ২ টি ঘটনা আমাকে বেশি আকর্ষণ করে।

বাবাকে দেখা মাত্রই ঐখানের হাজার হাজার মানুষের সামনে থেকে মানুষ বাবাকে ডেকে সামনে নিলেন। আনমানিক ৫ হাজারের মমতো মানুষ তার মধ্যে অধিকাংশই মাওলানা ইউসুফ সাহেবের গড়া আলেম দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে এসেছেন। এরপরের দৃশ্য থেকে আমি একবার বাবার দিকে তাকাই একবার মুষগুলোর দিকে তাকাই এই কি করুণ দৃশ্য! সকলের চোখেই পা‌নি...! বাবা মাইক দিয়ে কিছু কথা বললেন, কান্নার কারণে বলতেও পারে না তার পরেও যেটুকু বললেন তা হলোঃ-
"আমি যখন ১৯৭৫ সনে এখান থেকে ফাযিল পাশ করে বিদায় নেব তার ২দিন আগে থেকে আমার হুজুর আমার সাথে কথা বলেন নি, যেদিন চলে আসবো সেদিন হুজুর আমার সাথে হেটে হেটে অনেক দূর আসলেন এবং বললে আব্দুল আউয়াল তুমি আজকে আমার দিকে তাকাবা না কোন কথাও বলবা না শুধু সুজা হেটে চলে যাবা তা নাহলে আমি থাকতে পারবো না"

জানাজা শেষে কিছু লোক লাশ নিয়ে চলে গেলো দাফনের কাজে আর কিছু লোক আসলো আমাদের দিকে বিশেষ করে বাবাকে বুকে ঝরায়া ধরে কান্না করছে আর বলছে এই লোক কিভাবে এখানে আসলো, এমন সৌভাগ্য কিভা‌বে হলো আমাদের।

এরপর আমরা গেলাম বাবা যে বাড়িত থেকে লেখাপড়া করেছেন, সেখানে গিয়ে দেখতে হলো আরো করুন দৃশ্য। অনেকের সাথে দেখা করছেন, এমনভাবে কথা বলছেন যেন ওই মানুষগুলো যেনো আমাদের চেয়েও প্রিয়, আমার শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার ছাড়া কিছুই করার ছিল না কারণ আমি কাউকেই চিনিনা। হঠাৎ হুইল চেয়ারে বসা একজন একটু সময় নিয়ে লোকটি যা বললো তা হলোঃ-
"তুমি যতদিন আমার বাড়িত ছিলা ততোদিনে মাত্র একবার আমি তোমার বাড়িতে গিয়েছিলাম আর তুমি যখন আমার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে গিয়াছিলা এর পর ৯ বার আমি তোমার বাড়িতে গিয়েছিলাম শুধু তোমাক দেখার জন্য! এখন আমি অচল তাই আর যেতে পারিনা, এখনো স্বপনে আমি তোমাকে দেখি! মনে করছিলাম আর বুজি দেখা হবে না! কিভাবে তুমি আসলা বা'জান"

তখন আমার আর বুঝতে বাকী রইলো না বাবা কেনো এভাবে কেদেছিল, আজকের ঘটনা আমার জীবনের নতুন এক ই‌তিহাস। প্রথমত ছাত্র-শিক্ষকের এতো সুন্দর সম্পর্ক এবং দ্বিতীয় ঘটনার মতো সম্পর্ক এতোটা বাস্তব ও সত্য হয় কিনা আমার চোখের সামনে না ঘটলে আমার বিশ্বাস হতো না।

(‌বিঃদ্রঃ লাল বৃ‌ত্তে চি‌ন্হিত করা ছ‌বি‌টি আমার বাবার ছ‌বি, সকলে বাবার জন্য দোয়া করবেন, ও‌নি খুবই অসুস্হ 🙁 )

উপরের লিখা ও ঘটনা বাবা মারা যাওয়ার ২৭ দিন আগের (২৭ মার্চ ২০১৬ ইং)। লিখাটি আজকে সামনে পড়লো তাই রি-পোস্ট করছি এবং সেদিনের ছবিটি কমেন্ট বক্সে দিয়ে দিলাম।
Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

Contact Form